স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী নগরীতে গত ১৮ ডিসেম্বর ১৫০ কেজি মৃত ছাগলের মাংস, ৪টি মৃত জবাই করা ছাগল ও ২৭ টি রুগ্ন-অসুস্থ ছাগলসহ ৪ জন ব্যক্তিকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এসব খাওয়ার অযোগ্য মাংস সরবরাহ করা হত নগরীর বিভিন্ন খাবার হোটেল, রেস্তোরা, জেলখানা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন জায়গায়।
গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই অভিযানে আটককৃতদের একজন কসাই মশিউর রহমান আপেলের কাছ থেকে প্রতি কেজি ৬২০ টাকা দরে ছাগলের মাংস ক্রয় করতেন নগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন ভদ্রামোড়ে অবস্থিত অতিথি হোটেলের মালিক আইনুল ইসলাম। যেখানে বাজারে ছাগলের মাংসের দাম প্রতি কেজি ৯০০ টাকা। এতে করে অতিথি হোটেলের রান্না করা মাংসের মান নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, মৃত ও রুগ্ন ছাগলের মাংস উদ্ধারের পর নগরীর হোটেল-রেস্তোরায় মাংস খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকায় ভালো। আর অতিথি হোটেলের নাম প্রকাশ হওয়ায় এই হোটেলটির মাংসের মান নিয়ে ভোক্তাদের মধ্যে যথেষ্ট প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সূত্র জানায়, মশিউর রহমান আপেলের কাছ থেকে নিয়মিত মাংস ক্রয় করতেন অতিথি হোটেলের মালিক আইনুল হোসেন। প্রতি কেজি ৬২০ টাকা দরে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ কেজি করে মাংস ক্রয় করতেন তিনি। এদিকে খুচরা মূল্য সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হলেও প্রতি কেজি ২৮০ টাকা কম মূল্যে ক্রয় করতেন তিনি। এনিয়ে সচেতন মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এত কম মূল্যে মাংস ক্রয় করলে মৃত ছাগলের মাংস ছাড়া আর কি পাওয়া যাবে বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিথি হোটেলের মালিক আইনুল হোসেন বলেন, আমি শুধু আপেলের কাছ থেকেই নয়, নগরীর বিভিন্ন বাজার থেকে প্রতি কেজি ৬২০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দরে খাসির মাংস ক্রয় করি। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের সীল যুক্ত মাংস ক্রয় করা হয় আমার হোটেলে। এত কম মূল্যে মাংস ক্রয় করার ব্যাপারে তিনি বলেন, পাইকারী কিনলে এমন মূল্যেই পাওয়া যায় বাজারে।
রাজশাহী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মোহাম্মদ আকতার হোসেন বলেন, মানুষসহ সকল স্থলজ প্রাণীর রক্তে কার্বনডাইঅক্সাইড থাকে। যদি এসব প্রাণীর শ্বাসরুদ্ধ বা স্বাভাবিক মৃত্যু হয় তাহলে রক্তে কার্বনডাইঅক্সাইড থেকে যায়। ফলে রক্তগুলো মাংসের সাথে মিশে যায়। সুতরাং এই মাংস খাওয়া মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আর যখন জবাই করা হয় তখন রক্তগুলো দেহ থেকে বের হয়ে যায় ফলে মাংসের সাথে ক্ষতিকর কিছু থাকে না।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় সহকারী পরিচালক মারুফ আল হাসান বলেন, মশিউর রহমান আপেল ও ফাইসাল হোসেনকে মৃত ছাগলের মাংস সংরক্ষণ করার অভিযোগে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এটি একটি সতর্কবার্তা তাদের জন্য। এছাড়া রাজশাহী মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমাদের মৌখিকভাবে বলেছেন, এ ধরনের তারা কাজ ভবিষ্যতে করবেন না। আমরাও নজরদারিতে রেখেছি তাদের। রাজশাহী নগরীর অতিথি হেটেলসহ অন্যান্য খাাবার হোটেল নিয়মিত মনিটরিং করা হবে বলেও জানান তিনি।
মতিহার বার্তা / ইএবি
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.